প্রিন্ট তারিখঃ Nov 5, 2025 ইং |
প্রকাশের তারিখঃ Oct 12, 2025 ইং
দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ স্কুল মাঠে প্রতিবছর দুর্গাপূজার পরের দিন বসে একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। বহু বছর আগে এ মেলাকে ঘিরে প্রচলিত ছিল ভিন্ন এক প্রথা এখানে আদিবাসী যুবক-যুবতীরা নিজেদের জীবনসঙ্গী বেছে নিতেন। কালের বিবর্তনে সেই প্রথা আজ আর নেই, তবে এর ভুল প্রচারণা এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বর্তমানে এই মেলাটি মূলত আদিবাসীদের একদিনের মিলন মেলা। এখানে বিভিন্ন বয়সের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেন। তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে গান, নৃত্য, নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো অনেকেই পুরনো ধারনাকে কেন্দ্র করে একে "বউ মেলা" বা "জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা" নামে প্রচার করছেন।
মেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই তারা পরিষ্কার করে বলে আসছেন এটি আর বউ মেলা নয়, এটি শুধুমাত্র আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মিলনমেলা। তবে মেলায় যেহেতু তরুণ-তরুণীদের সমাগম ঘটে, সেক্ষেত্রে একে অপরকে ভালো লাগতে পারে, সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। তবে তা শুধুমাত্র পারিবারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোয়, মেলায় কোনো সামাজিক বা আনুষ্ঠানিক বিয়ের নিয়ম নেই।
গত এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেলাটিকে ঘিরে নানা বিভ্রান্তিকর পোস্ট ছড়ানো হয়েছে। কেউ একে বউ মেলা বলছেন, কেউ আবার জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা বলে প্রচার করছেন। এতে স্থানীয় ও বাইরের মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
মেলার সঙ্গে জড়িত এক আয়োজক বলেন, আমরা বারবার জানাচ্ছি, এখন এই মেলা শুধুমাত্র দুর্গাপূজার পর আদিবাসীদের মিলন মেলা। এখানে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। তাই কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।
জীবনসঙ্গী মেলার অপপ্রচার দেখে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, চট্টগ্রাম,বরিশাল, নোয়াখালী, সিলেট খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এক দর্শনার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুনেছিলাম এখানে জীবনসঙ্গী খোঁজার মেলা বসে। সেই বিশ্বাসে আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গোলাপগঞ্জে আসি। কিন্তু এসে দেখি আসলে এটি জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার কোনো মেলা নয়, বরং আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক মিলন মেলা। ফলে আমরা অনেকটা প্রতারিত বোধ করেছি। ভবিষ্যতে যেন এমন বিভ্রান্তি আর না ছড়ায় সে জন্য কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি দরকার।
স্থানীয়রা মনে করেন, এই মেলার সঠিক তথ্য প্রচার করা জরুরি। কারণ, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য তুলে ধরার এই আয়োজনকে মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে কলুষিত করা হলে আদিবাসী সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মেলাটিকে ঘিরে এলাকাজুড়ে যতটা আলোচনা হয়, তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এজন্য সচেতন মহল মনে করছেন, সময় এসেছে এই মেলাটিকে তার প্রকৃত পরিচয়ে তুলে ধরার।
উল্লেখ, একসময় এই মেলায় আদিবাসী তরুণ তরুণীরা পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নিতেন, এমন পৌরাণিক কাহিনি বা জনশ্রুতি ছড়িয়ে রয়েছে। তবে এর স্বপক্ষে প্রমাণ খুজতে একাধিক আশিউধ্বো মানুষের সাথে কথা বলা হলেও তারা এর স্বপক্ষে কোনো কিছু উপস্থাপন করতে পারেননি।