Logo
প্রিন্ট তারিখঃ Nov 6, 2025 ইং | প্রকাশের তারিখঃ Oct 18, 2025 ইং

ল্যাব নেই, যন্ত্রপাতি নষ্ট—দুমকির শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

Post Image

 দুমকি (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ল্যাবরেটরি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে হাতে-কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোথাও কিছু যন্ত্র থাকলেও তা অব্যবহৃত থেকে মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে।

পরীক্ষার সময়সূচিতে ব্যবহারিক অংশ থাকলেও বাস্তবে ল্যাব ব্যবহার না করে শুধুমাত্র খাতা জমার ভিত্তিতে নম্বর প্রদান করা হয়। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, দুই দশক ধরে পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং বিজ্ঞান শিক্ষকদের ‘ভূরিভোজ আয়োজনের’ মতো অনিয়মও চলে আসছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব থাকলেও আইসিটি শিক্ষার্থীরা বাস্তবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারছে না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুমকিতে ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮টি কলেজ এবং ১৫টি মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শাখা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই, যন্ত্রপাতি নষ্ট, অথবা শ্রেণীকক্ষ সংকটে বিজ্ঞানাগারই সাধারণ ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দুমকি একে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বিজ্ঞানাগার তালাবদ্ধ এবং ময়লা-আবর্জনায় ভরা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গত ৬ মাসেও কোনো ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। নাসিমা কেরামত আলী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রহিমা বেগম বলেন, “শ্রেণীকক্ষ সংকট, বিদ্যুৎ সমস্যা এবং বেসিন না থাকায় ব্যবহারিক ক্লাস করানো যাচ্ছে না।”

সরেজমিনে উত্তর শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরবয়েড়া মা/বি, জয়গুননেছা মা/বি, সালামপুর আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। নবম থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস পাচ্ছেন না।

সাতানী আমির উদ্দীন স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল জব্বার বলেন, “রুটিনে ব্যবহারিক ক্লাস রাখা আছে, কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাবে তা নেওয়া সম্ভব হয় না।” সরকারি জনতা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই বা যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।”

দুমকি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সফিকুল ইসলাম বলেন, “পরিদর্শনের সময় ল্যাবগুলো গুছিয়ে রাখা হয়, পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। একা মানুষ হওয়ায় সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পরিদর্শন করা সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. এজাজুল হক বলেন, “বিষয়টি আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে।”

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত ল্যাব সংস্কার ও হাতে-কলমে শিক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সঠিক ব্যবহারিক শিক্ষা ছাড়া বিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি তৈরি সম্ভব নয়।


© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Time's of Dinajpur
🖨️ প্রিন্ট করুন 💾 সেভ করুন