ছবির ক্যাপশন: কড়াই দেখতে ভিড় করছেন উৎসুখ জনতা
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ীতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সময় একটি বিশাল আকৃতির লোহার কড়াই উদ্ধার হয়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজমহলের একটি কক্ষ থেকে ধ্বসে পড়া সুড়কি সরানোর সময় কড়াইটি পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চলমান পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এটি আবিষ্কৃত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কড়াইটি চারদিকে ৪৮ ইঞ্চি (প্রায় ৪ ফুট) চওড়া, গোলাকার ও সমতল। এর প্রাচীরের উচ্চতা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি এবং দুই পাশে রয়েছে বড় আকৃতির লোহার আংটা। সম্পূর্ণ কড়াইটি লোহার তৈরি এবং ওজনে বেশ ভারী।
স্থানীয়দের মতে, কড়াইটি রাজা-মহারাজাদের আমলে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি পূর্ববর্তী ইপিআর ক্যাম্পের রান্নার সরঞ্জাম, আবার কেউ বলছেন—পুণ্যাহ উৎসবে বিশেষ ধরনের পুরি বা লুচি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো।
দিনাজপুরের শেষ রাজা জগদীস নাথ রায় বাহাদুর ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর ১৯৫৬ সালে দিনাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে তিনি ভারতে চলে যান। তার পর থেকেই রাজবাড়ীটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দরজা-জানালা ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।
রাজবাড়ীর বাসিন্দা মো. হেলাল হোসেন জানান, “খসে পড়া সুড়কি সরানোর সময় কড়াইটি পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই অনেক মানুষ এটি দেখতে ভিড় করছেন।” বর্তমানে এটি রাজবাড়ীর শ্রী শ্রী কালিয়াজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে সংরক্ষিত রয়েছে।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক আজাহারুল আজাদ জুয়েল বলেন, “রাজবাড়ীটি এক সময় ইপিআর বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। পরে বিজিবি ক্যাম্প কুঠিবাড়ীতে স্থানান্তরিত হয়। রাজাদের আমলে এখানে পুণ্যাহ উৎসব পালিত হতো। কড়াইটি কোন সময়ের, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন হলেও শতবর্ষ পেরোয়নি।”
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া কড়াইটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় যুবক সজিব চন্দ্র রায় ও সুমিল অধিকারি বলেন, “এই কড়াইটি রাজাদের হালখাতা বা উৎসব উপলক্ষে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। এত বড় ও ভারী হওয়ায় হয়তো কেউ নিয়ে যেতে পারেনি, সুড়কির নিচে চাপা পড়ে ছিল।”
এই আবিষ্কার দিনাজপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ীকে ঘিরে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনায় রাজবাড়ীটির আরও উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কার্যক্রম জোরদার হবে।